মদীনায় মুগীরা ইবনু শু'বা এর আবুলুলু নামক একজন ইরানী গোলাম ছিল । একদি সে ওমর (রাঃ) এর নিকট তার মনিবের বিরুদ্ধে নালিশ দিল যে, আমার মনিব আমার প্রতি অতিরিক্ত মাশুল আরোপ করে রেখেছেন । আপনি তা কমিয়ে দিন । ওমর (রাঃ) তাকে মাশুলের পরিমাণ কত জিজ্ঞাসা করলে সে উত্তর দিল দু' দেরহাম । এবার জিজ্ঞাসা করলেন তুমি কি কাজ কর ? সে বলল আমি ছুতার মিস্ত্রি, ভাস্কর, ও কর্মকার । ইহা শুনে ওমর (রাঃ) তাকে বললেন তাহলে এটা তোমার জন্য অতিরিক্ত মাশুল নয় । গোলামটি এই জবাব শুনে খুবই অসন্তুস্ট হল এবং বলল আচ্ছা বুঝে নিব বলে সে চলে গেল । ওমর (রাঃ) বললেন এক গোলাম আমাকে হুমকি দিল । এর পর তিনি নিরব রইলেন ।
পরের দিন খুব ভোরে ওমর (রাঃ) নামাযের জন্য মসজিদে যান । আবুলুলু বিষাক্ত ছুরি লুলিয়ে রেখে পূর্ব থেকেই ওৎপেতে দাঁড়িয়েছিল । ওমর (রাঃ) নামাযের তাকবীর বলার সংগে সংগে সে উক্ত বিষাক্ত ছুরি দ্বারা তার কাঁদে ও নাভীতে ক্ষীপ্ত হস্তে ছয়টি আঘাত করে । পার্শ্ববর্তী লোকেরা আবুলুলুকে ধরার জন্য এলে তাদেরকেও উক্ত ছুরি দ্বারা আঘাত করে, পরে যখন দেখল তার নিজের পরিত্রাণের উপায় নেই তখন সে নিজে নিজেই উক্ত ছুরি দ্বারা আত্নহত্যা করল ।
আহত হওয়ার পর ওমর (রাঃ) আব্দুর রাহমান ইবনু আওফ (রাঃ) কে নামায পড়াবার নির্দেশ দিলেন । ইবনু আওফ (রাঃ) অতিদ্রুত নামায় আদায় করলেন । এদিকে ওমর (রাঃ) মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন । নামায শেষ হওয়ার পর ওমর (রাঃ) কে তার বাড়িতে আনা হল, তিনি লোকদের জিজ্ঞারা করলেন আমার হত্যাকারী কে ??? উত্তর দেওয়া হল আবুলুলু । আবুলুলুর নাম শুনে তিনি এই বলে আল্লাহর শোকর আদায় করলেন যে, আমার রক্তে কোন মুসলমানের হাত রঞ্জিত হয় নাই ।
ওমর (রাঃ) এর চিকিৎসার জন্য জনৈক আনসারী চিকিৎসককে ডাকা হল । তিনি উনাকে শক্তির জন্য দুধ পান করান । সেই দুধ সাথে সাথেই ক্ষত স্তান দিয়ে বেরিয়ে পড়ল । এটা দেখে চিকিৎসক ওমর (রাঃ) কে বললেন হে আমিরুল মুমিনীন আপনি উত্তরসূরী নির্বাচন করুন । ( অর্থাৎ শেষ সময় উপস্তিত ) । এ কথা শুনে পার্শ্ববর্তী দাড়ানো লোকেরা কাঁন্নায় ভেঙে পড়লেন । ওমর (রাঃ) বললেন যারা কাঁদছে তারা আমার নিকট হতে চলে যাক । তোমরা শুননি রাসুল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন- মৃতের আত্নীয় স্বজনের কাঁন্নার জন্য মৃতকে আযাব দেয়া হয় ।
হযরত ওমর (রাঃ) যখন বুঝলেন যে দুনিয়া থেকে বিদায়ের সময় অতিনিকটবর্তী তখন তিনি নিজ পুত্র আবদুল্লাহ (রাঃ) কে ডেকে বললেন হে পুত্র উম্মুল মুমিনীন আয়িশাহ (রাঃ) কে গিয়ে বল ওমর সালাম দিয়েছে । সাবধান, আমিরুল মুমিনীন বলবেনা । কারণ আমি এখন আমিরুল মুমিনীন নই । এরপর আরজ করবে, ওমর চায় আপনার কামরায় তার সম্মানিত দু' বন্ধুর পাশে তাকে স্তান দেয়া হোক ।
আবদুলল্লাহ (রাঃ) যখন আয়িশাহ (রাঃ) এর কাছে গিয়ে পৌছলেন তখন দেখলেন যে আয়িশাহ (রাঃ) বসে কাঁদছেন । তিনি যথাযথভাবে ওমর (রাঃ) এর বার্তা আয়িশাহ (রাঃ)এর কাছে পৌছে দিলেন । আয়িশাহ (রাঃ) বললেন, আমি নিজের জন্য এই স্তান সংরক্ষিত রাখতে চেয়েছিলাম কিন্তু আমি তাকে আমার নিজের উপর প্রাধান্য দিচ্ছি ।
এরপর আবদুল্লাহ (রাঃ) ফিরে এলে ওমর (রাঃ) লোকদের ডেকে নিজেকে বসাতে বললেন । তাঁকে ভর দিয়ে বসানো হল । এরপর তিনি পুত্রের নিকট জানতে চাইলেন সে কি উত্তর নিয়ে এসেছে । আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেন, আপনার ইচ্ছা পূর্ণ হয়েছে । ওমর (রাঃ) শুনে বললেন আলহামদুলিল্লাহ আমার সব চাইতে বড় ইচ্ছা ইহাই ছিল । এরপর তিনি নিজ পুত্রকে বললেন "দেখ আমার জানাযা দিয়ে যে সময় আয়িশাহ (রাঃ) এর কামরায় হাজির হবে তখন আবার সালাম জানাবে আর বলবে ওমর অনুমতি প্রার্থনা করছে । যদি তিনি অনুমতি দেন, তাহলে সেস্তানে দাফন করবে, নতুবা সাধারণ গোরস্তানের মাটিতে সমর্পণ করে দেবে ।
( ওমর (রাঃ) এর ইচ্ছা ছিল, আয়িশাহ (রাঃ) যেন সন্তুষ্টচিত্তে অনুমতি দেন । কোন প্রকার প্রভাব, কৃত্তিমতা বা সৌজন্যের অনুপ্রবেশ তাতে না ঘটুক ।
অন্তিমকালে তিনি নিজ পুত্র আবদুল্লাহ (রাঃ) কে বললেন, হে পুত্র আমাকে মাটিতে শুইয়ে দাও । আবদুল্লাহ (রাঃ) পিতার নির্দেশ পালন করলেন। এরপর তিনি আল্লাহর নিকট নিজ প্রাণ সপে দিলেন । "ইন্নালিল্লাহি ওআ ইন্না ইলাইহি রাজিউন" ।
আহত হবার তৃতীয় দিনে ২৭শে জিলহাজ্জ বুধবার রাতে ওমর (রাঃ) মুসলিম বিশ্বকে শোক সাগরে নিমজ্জিত করে দুনিয়ার জিবনে পরিসমাপ্তি লাভ করেন । পরের দিন সকালে তাঁর দাফন সমাপ্ত হয় । এ সময় তাঁর বয়ষ তাঁর দু' সম্মানিত বন্ধুর মতই ৬৩ বৎসর ছিল । তার খিলাফত কাল দশ বৎসর ছয় মাস চারদিন স্তায়ী ছিল ।
0 Comments